পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত -আমল ও নাময পড়িবার নিয়ম
![]() |
শবে বরাত
পবিত্র শবে বরাত
শাবান আরবী
বছরের অষ্টম মাস । এ মাসটি বছরের ১২ মাসের মধ্য একটি উল্লেখযোগ্য ফযীলতের মাস । বিশেষত
এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে শবে বরাত । এ কারনে এর মরতবা অত্যাধিক । এ দিনের ফজিলত
অনেক ।
আবু বকর সিদ্দিক
(রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে ,রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )
বলেছেন ,হে মানবগণ! তোমরা শা’বান মাসের ১৫ই তারিখের রতে উঠ,ঐ রাত অত্যন্ত পবিত্র
। ঐ রাতে আল্লাহ তা’য়ালা ঘোষণা করেন,হে মানবগণ! তোমদের মধ্য কেউ প্রর্থনা করার আছে
কি? আজকেই আমি তোমাদের প্রর্থনা গ্রহন করব ।
কথিত আছে,
এ রাতে আল্লাহর আদেশে পৃথিবীর মানুষের জন্য ফেরেশতা রিযিক বন্টন করে থাকে । এ রাতে
নফল ইবাদত করা এবং ঐ তারিখে রোযা রাখা উত্তম।
হযরত রাসূল
(সাঃ) বলেছেন, এ রাতে আল্লাহ সকলেরই গুনাহ মর্জনা করবেন। কিন্তু যারা যাদুকর ,গনক
,বখীল, সুদখোর ,যেনাকার ,নেশাখোর ,পিতা মাতার প্রতি দুর্ব্যবহারকারী ,কৃপণ এর গুনাহ
মাফ করবেন না ।
হযরত রসূলুল্লাহ
( সাঃ) বলেছেন – তোমরা শবে-বরাতকে বুযূর্গ জানবে । উহা শা’বানের ১৫ তারিখের
রাত । ঐ রাতে
ফেরেসতা তাদের উপর নাযিল হয়, যারা ঐ রাতে ইবাদত করে । উহা এমন রাত যে, আল্লাহ তা‘য়ালা
ঐ রাতকে বুযূর্গ করেছেন । যে ব্যক্তি ঐ রাতে ইবাদত করে , আল্লাহ তা‘য়ালা তার ছগীরাহ
কবিরাহ, গুনাহ মাফ করে দেন অর্থাৎ সে সমস্থ
গুনাহ হতে পাক পবিত্র হয় ।
হযরত রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বরেছেন, যে ব্যাক্তি দোযখের আগুন হতে রক্ষা পেতে চায় সে
যেন ১৫ই শাবানের রাতে ইবাদত করে । তা হলে আল্লাহ
তা‘য়ালা তার উপর দোযখের আগুন হারাম করে দিবেন
। হযরত ( সাঃ) আরো বলেছেন- যে ব্যক্তি ১৫ই শা’বানের রাতকে জীবিত রাখে , আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত রাখবেন অর্থাৎ, মৃত্যুর পরেও তার আমলনামায়
উহার সওয়াব লিখতে থাকবে ।
একদা রাতে
হযরত রাসূল ( সাঃ) সিজদায় পড়ে কাঁদছিলেন , তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) এসে পাশে দাঁড়ালেন
। তখন হযরত রাসূল (সাঃ) বললেন , তুমি জান আজকে কোন রাত? এটা শাবানের
১৫ই রাত- আল্লাহর নিকট প্রর্থনা করার রাত । যাও
আজকে যত পার আল্লাহর কাছ থেকে আদায় করে লও ।
হযরত রাসূলুল্লাহ
( সাঃ) বলেছেন, জিব্রাঈল আমার নিকট এসে বলেছেন , ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)- আপনি উঠুন
, নামায পড়ুন এবং দোয়া করুন। কারণ, এটা ১৫ই শা’বানের রাত। এই রাতে আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর
বান্দাগণের জন্য রহমতের ১০০টি দরশা খুলে দেন । ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) আপনি এ রাতে আপনার
উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করুন । কিন্তু মুশরিক যাদুকর,গনক,কৃপণ,মদ্যপানকারী,সূদখোর
ও জেনাকারের জন্য কখনো ক্ষমা প্রর্থনা করবেন না । তার কারন হল আল্লাহ তা‘য়ালা এদেরকে
শাস্তি দিবেন ।
হযরত রাসূলুলাল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন,-
উচ্চারণঃ
তু’বা লিমাই ইয়া’মালু ফী লাইলাতিন নিসফি মিন শা’বান খাইরান ।
অর্থাৎ- ঐ
ব্যাক্তির জন্য আনন্দ ,যে ব্যাক্তি শা’বানের ১৫ তারিখ রাতে নেক আমল অর্থাৎ ইবাদত বন্দেগী
করে ।
হাদীস শরীফে
একটি নকল দেখা যায় – এক সময় হযরত ঈসা (আঃ) জিব্রাঈলের মারফত আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করলেন –হে প্রভু
! বর্তমানে আমার চেয়ে বেশি বুযুর্গ আছে কি
? উত্তরে আল্লাহ বলেন – আছে । তখন ঈসা (আঃ) বললেন, কোথায় ? আল্লাহ বললেন তোমার সম্মুখে
ঐ পাথরখানা সরিয়ে দেখ । ঈসা (আঃ) পাথর সরাতে
না পেরে ইতস্ততঃ করতে লাগলেন । আল্লাহ হুকুম দিলেন, “ ইয়া ঈসা ! তোমার আছা (লাঠি) দিয়ে
তাতে আঘাত কর ।”
ঈসা (আঃ)
আল্লাহর আদেশে তার হাতের আছা ( লাঠি) দিয়ে আঘাত করা মাত্র পাথরখানা দ্বিখন্ডিত
হয়ে গেল । তখন ঈসা (আঃ) দেখতে পেলেন , এর
ভিতরে একজন দরবেশ তাসবীহ হাতে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল এবং তার সম্মুখে একটি ফল । তাকে জিজ্ঞেস
করলেন , হে মান্যবর ! আপনি কে এবং কতদিন যাবৎ এ রখম ইবাদত করছেন এবং ঐ আনারটিই বা কিভাবে
আসল ?
দরবেশ বললেন,
আমি এতদঙ্চলের লোক । আমার মাতার দোয়ায় আমি
বুজর্গী পেয়েছি । আমি চারিশত বছর এখানে আছি এবং আল্লাহ নিজে প্রত্যহ একটি করে আনার
ফল পাঠিয়ে দেন ।
ইয়া শুনে
ঈসা (আঃ) সিজদায় পড়ে কাঁদতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন , হে খোদাওন্দ কারীম ? আমি তোমার
কাছে অপরাধী । এ ব্যক্তি আমার চেয়েও বুজর্গ ও সম্মানিত ।
আল্লাহ্ বললেন,
হে ঈসা ! তুমি জেনে রাখ যে, তোমার পরবর্তী শেষ পয়গাম্বর হযরত মুহাম্মাদ
(সাঃ)- এর উম্মতের মধ্য কোটি কোটি লোক এ বুজর্গ ব্যাক্তির চেয়ে বেশি পণ্য অর্জন করতে
সমর্থ হবে । কেননা শেষ নবীর উম্মতদের মধ্য যদি কেউ সাবান মাসের ১৫ই তারিখ রাত জেগে
ইবাদাত করে তাহলে আমি তাদের অত্যধিক পুণ্য দান করব । ঈসা (আঃ) আফসোস করে বললেন, আমি নবী না হয়ে যদি শেষ নবীর
উম্মত হতাম তাই ভাল হত ।
১৫ ই শা’বানের
রাতে সন্ধার পর গোসল করা উচিত । ইহা মুস্তাহাব । হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে
ব্যাক্তি ১৫ ই শা’বানের রাতে ইবাদতের নিয়তে গোসল করবে, তার জন্য প্রত্যেক ফোঁটা পানিতে
৭০০ রাকা’য়াত নামাযের সওয়াব লেখা হবে ।
এটা প্রতিপন্ন
হয় যে, শবেবরাতের নামায কত বড় ফজীলতের নামায । অতএব প্রত্যেকেরই এ নামায আদায় করতে
চেষ্ট করা উচিত । বরাতের রাতে গোসল করে এশার নামায আদায় করবে । এরপর দুই রাকয়াত সুন্নতের
পর যে যত নামায পড়তে পারে তাতে কোন বাধা-নিষেধ নেই ।
তাছাড়া কোরআন
তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদত করা য়ায়।
যেমন হাদিসে আছে ,শা’বানের চাঁদের চৌদ্দ তারিখে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়ে নিম্মলিখিত দোয়া ৪০
বার পাঠ করিলে ৪০ বছরের সগীরাহ গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ।
দোয়া
উচ্চারণঃ লা-হাওলা ওয়ালা-কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ
।
শবে- বরাত নামাযের নিয়ত
আরবী নিয়তঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাতাই সালাতিল লাইলাতিল বারাআতি সুন্নাতু
রাসুলুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
বাংলা নিয়তঃ
আমি কিবলামুখী হইয়া আল্লাহর উদ্দেশ্য দুই রাকাত লাইলাতুল বারাত নামায আদায় করিবার নিয়ত
করিলাম । আল্লাহু আকবার ।
শবে-বরাতের নামায পড়ার নিয়ম
যে যত নফল নামায পড়তে পারে তাতে কোন বাধা-নিষেধ নেই ।
তাছাড়া কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদত করা য়ায়।
নামায শেষ
করে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরূদ,তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা অতি সওয়াবের কাজ ।
সমস্থ রাত
জেগে যে ব্যাক্তি শবে-বরাতের নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে নেক দিলে কান্নাকাটি করবে
আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন এবং তার পরের দিন সে সদ্য প্রসূত শিশুর ন্যায় পৃথিবীতে
অবতরণ করবে ।
No comments