রমযান মাসের ফজীলত


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

রমজান মাসের ফজীলত




রোযা ইসলাম ধর্মের তৃতীয় রুকুন বা ভিত্তি । আরবী বছরের নবম মাস রমজান । রমজান শব্দটি রমজ ধাতু হতে উৎপন্ন ইহার অর্থ জ্বলে যায় যেমন লৌহ আগুনে দগ্ধ হলে কোমল হয় ও তার মরিচাগুলি ঝরে পড়ে যায় সেইরূপ রোযা থাকলে ক্ষুধার আগুনে দগ্ধ হয়ে মানুষ্য-হৃদয় কোমল হয় এবং মরিচারূপ পাপ রাশি ঝরে পড়ে যায় । এ জন্যই এ মাসের নাম রমজান । রমজান মাসে রোজা  প্রত্যেক জ্ঞানসম্পূন্ন   মুসলমান নর-নারীর উপর ফরয। যে ব্যক্তি ফরয কে অমান্য করবে ,সে কাফের হয়ে যাবে ।

‘সওম’   আরবী শব্দ । ‘সওম’ অর্থ হল কোন কিছু থেকে বিরত থাকা । ইহার বহুবচন হইল ‘সিয়াম’। ইসলামের পরিভাষায় সুবহে সাদেক হইতে সূর্যাস্ত   পর্যন্ত পানাহার এবং ইন্দ্রিয় তৃপ্তি হইতে বিরত থাকাকে  সওম বা রোজা বলে ।
আল্লাহ্ তাআলা কালামে পাকে ইরশাদ করেনঃ-
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে । যেমনি তোমাদের পূর্ববর্তী বান্দাদের উপর ফরয করা হয়েছিল । এটা এজন্য করা হয়েছে যাতে তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার ।
আল্লাহ্ তাআলা অন্য এক আয়াতে বলেন-
অর্থঃ রমযান মাস এমন একটি মাস,যাতে পবিত্র কুরআন অবর্তীণ হয়েছে,যা মানুষের পথ প্রদর্শক এবং সত্য পথ প্রদর্শনের ও সত্য-মিথ্যার  প্রভেদ করার স্পষ্ট নির্দশন । তোমাদের ভিতরে যে কেউ রমযান মাস প্রাপ্ত হয়, সে যেন উহাতে রোযা রাখে । যে ব্যাক্তি পীড়িত হয় কিংবা প্রবাসে (সফরে) থাকে, সে ব্যাক্তি যেন (ইফতারের দিবসগুলোর) পরিমান ( হিসেব করে ) পরবর্তী দিবসে রোযা রাখে ।
রমজান মাসে আল্লাহ্ তাআলা বিশ্ব মানবের মুক্তিসনদ সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থা, অপরিবর্তনীয় বিধান-গ্রন্থ কোরআন শরীফ নাজিল করেছেন, এতে রমজান মাসের বিশেষ ফজীলতের কথাই প্রমানিত হয় ।
রমযান মাসের ফজীলতের অন্য কারণ এটাই যে, আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়ার সমন্থ মসলমান স্ত্রী-পুরুষের জন্য এক বিশেষ ইবাদাত রোযা ফরজ করে অশেষ নেকী হাছিল করার এবং আল্লাহ্ তাআলার রহমত , মাগফিরাত,দোযখের ভীষণ শাস্তি হতে মুক্তি লাভের বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন ।এ মাসে তারাবীহ নামায আদায় করে আল্লাহ্ তাআলার বান্দারা তাঁর নৈকট্য অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ  করে । এটাও রমজান মাসের ফজীলতের একটি কারন।
এ মাসের আর একটি বৈশিষ্ট্য এটাই যে, এ মাসে যে ব্যাক্তি একটি নফল ইবাদাত আদায় করে সে অন্য মাসের একটি ফরজ  আদায় করার সম-পরিমান সওয়াব  পাবে ।    
আর যে লোক এ মাসে একটি ফরজ কাজ আদায় করবে সে অনান্য মাসের সত্তরটি ফরজ কাজ আদায় করার সওয়াব লাভ করবে ।
এ মাসে এমন একটি রাত আছে , যার নাম ‘ক্বদরের রাত্রি ‘। এটা হাজার মাস হতেও উত্তম –অর্থাৎ এ রাতের এত বরকত ও মর্তবা যে, ঐ রাতে যারা ইবাদাত-বন্দেগী করবে, তারা এক হাজার মাসের ইবাদাত বন্দেগী করার সওয়াবের তুল্য সওয়াব পাবে ।
এ মাসে ঈমানদারগণের রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয় । এ মাসে রোযাদারকে ইফতার করালে অশেষ সওয়াবের ভাগী হবে । হাদিস শরীফে আছে যে ব্যাক্তি রোযাদারকে ইফতার করায় এর বরকতে সে ব্যাক্তি সমস্থ পাপ হতে নাজাত লাভ করে এবং দোযখ হতেও মুক্তি পবে ।
আর ঐ রোযাদার ব্যাক্তির রোযার বদলে যে সওয়াব লাভ করবে ,সেও তার সমপরিমান সওয়াবের ভাগী হবে । এটা দ্বারা রোযাদারের সওয়াব কম করা হবে না ।
হুযূর পাক ( সাঃ ) – এর মোবারক জবান হতে এ কথা শ্রবণ করে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামগণ আরজ করলেন – ‘ হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের প্রত্যেকের এমন খানাপিনা  নেই, যা দ্বারা রোযাদার কে ইফতার করাতে পারি । ’ তখন নবীয়ে পাক ( সাঃ ) বললেন- “একটি খুরমা , একটু দুধ, একটু পানি দ্বারা যে ব্যাক্তি রোযাদার কে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তিই এই সওয়াব হাসিল করবে ।” রমযান মাস এতই বরকত পূর্ণ মাস যে, এর তুলনা নেই । এটা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ্ তাআলার খাস রহমত ।

পবিত্র রমযানের  ফজিলত খুব বেশী। হরযত মূসা (আঃ) মুনাজাত করেছেন, হে প্রভু ! উম্মতে মোহাম্মাদীকে আপনি কোন মাস প্রদান করবেন ? আদেশ হল , হে মূসা ! আমি তাদেরকে রমযান মাস প্রদান করব । হযরত মূসা (আঃ) আরজ করলেন,হে প্রভু ! রমযান মাসের কি ফযীলত ? আল্লাহ্ বললেন , পবিত্র রমযান মাসের ফযীলত সমস্থ মাসের উপর এরূপ; যেরূপ সমস্থ বান্দার উপর আমার ফযীলত । যে ব্যক্তি  এ পবিত্র রমযান মাসে রোযা রাখবে , তার জন্য আমি সমস্থ মানুষের ,সমস্থ পরীদের এবং সমস্থ সৃষ্টির ইবাদতের পরিমাণ ইবাদত তার আমলনামায় লিখে দিব । হযরক মূসা (আঃ) আরজ করলেন, হে প্রভু! আমাকেও উম্মতে মোহাম্মাদীর মধ্যে গ্রহন করুন তা হলে আমিও উক্ত সওয়াব হতে  বঞ্চিত হব না ।
আরও এরূপ বর্ণিত আছে , যে ব্যক্তি পবিত্র রমযানের রোযা রাখবে , সমস্থ ফেরেস্থা, সমস্থ পশু-পাখি , কীট- পতঙ্গ ও যত প্রানী পৃথিবীর উপর আছে ,এমন কি বৃক্ষলতাও তার জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করবে ।
হযরত  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , যে ব্যক্তি পবিত্র রমযানে রোযা  রাখে , তাকে আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামতের দিন একটি যমরূদ পাথরের বাড়ী প্রদান করবেন । ঐ বাড়ীর এক হাজার দরজা হবে । প্রত্যেক দরজার সম্মুখেই একটি বৃক্ষ হবে । তুমি যদি একশত বছর পর্যন্ত এই বৃক্ষের ছায়ায় ঘোরা-ফেরা কর, তা হলেও তুমি ওটার ছায়া হতে বের হয়ে আসতে পারবে না ।    


হযরত  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,  যে ব্যক্তি রমযান মাসে এক দিরহাম সাদকা দিবে , তার এ সাদকা অন্য মাসের সাদকা হতে হাজার দেরহামের চেয়েও উত্তম সাদকা হবে ।
হযরত  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযান মাসে জুমু‘আর দিন ইবাদত করে বা কুরআন শরীফ পাঠ করে , সে হাজার বছরেরর চেয়েও বেশি ইবাদতের সওয়াব পাবে ।
হযরত  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি রমযান মাসে শুধুমাত্র  আল্লাহর জন্য রোযা রাখে , সে যেন ছয় লক্ষ বন্দীকে  আজাদ করল, ছয় লক্ষ উট কোরবানী করল এবং ছয় লক্ষ বছরের ইবাদত করল ।

হযরত খাজা মুজাফফর কোহিস্তানী (রঃ) এর নিকট রোযা কতিপয় কারণে পছন্দ ।
১. রোযা রূহ ও দিল উভয়কে আল্লাহর স্বরণের দিকে ব্যস্ত রাখে
২. রোযা জ্ঞান অর্থাৎ নিজ  জ্ঞানের বিপরীত কোন বদ কাজ করতে দেয় না ।
৩. রোযা নফসে আম্মারার অর্থাৎ খাওয়া , পান করা ও শাহ্ওয়াতের বস্তু হতে রোযাদারকে সামলিয়ে রাখে ।

নবীয়ে পাক ( সাঃ ) আরো বলেন , “ আমার উম্মতদেরকে  রমযান মাসে এমন পাঁচটি নেয়ামত দান করা হয়েছে , যা পূর্ববর্তী কোন উম্মত কে  দান করা  হয়নি ।”

নেয়ামত গুলো হলঃ
 ১.  রোযাদার এর মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মেশ্ক বা কস্তুরীর চেয়েও অধিক সুগন্ধি বলে বিবেচিত ।
২. রোযাদার ব্যক্তির  প্রতি  আল্লাহ তাআলার আর একটি নেয়ামত  এটাই যে, তার পক্ষ হয়ে পানির মাছ আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রর্থনা করতে থাকে ।
৩. আল্লাহ তাআলার আর একটি নেয়ামত এটাই যে, রোযার মাসে দৈনিক  নুতুন নুতুন  সাজে বেহেশতকে সাজানো হয়,  এবং আল্লাহ পাক বেহেশতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ আমার নেক বান্দাগণ পৃথিবীর দুঃখপূর্ণ জীবন শেষ করে তোমার বুকে স্থ্ন নেওয়ার  জন্য শীঘ্রই আসছে।”   
৪. রমযান মাসে শয়তানকে  বন্দী করে রাখা হয় । এজন্য শয়তান অন্য মাসের মত এ মাসে রোযাদারকে ধোঁকা ও বিভ্রান্ত করতে পারে না ।
৫. এ মাসের শেষ রাতে রোযাদার বান্দাগণের সমুদয় গুনাহ হতে ক্ষমা পাওয়ার কথা ঘোষণা করে দেওয়া হয় ।
নবীয়ে পাকের জবানে ‘রমযান মাসের শেষ রাত’ বাক্যটি  শ্রবণ করে সহাবাগণ আরজ করলেন – “ হে আল্লাহর রাসূল ! এটাই  কি শবে ক্বদর ?” উত্তরে হুযূরে পাক (সাঃ ) ইরশাদ করলেন –না, শবে ক্বদরের কথা বলা হচ্ছে না  বরং রমযান মাসের সর্বশেষ রাতটির কথা বলা হয়েছে  । আর তা এজন্য যে , মজুরের মজুরী তখনই দেয়া হয় , যখন মজুর তার উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পুরাপুরি সমাধা করে । অর্থাৎ রমযান মাসের দায়িত্বসমূহ ঠিকমত পালন করলে  মাসের শেষ রাতে বান্দাগণ পুরস্কারের অধিকারী বলে বিবেচিত হবে এবং তাদের  মাফ করে পুরুস্কৃত করা হবে ।  





No comments

Powered by Blogger.